স্মার্ট টিভি কেনার আগে যে বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত

 স্মার্ট টিভি কেনার আগে যে বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত



বর্তমান সময়ে আমাদের এই তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়াতে স্মার্ট টিভি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি স্মার্ট টিভি সম্পর্কে কোন ধারণা না রাখেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

আপনি যদি স্মার্ট টিভি কিনতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

যেমনঃ-

ব্র্যান্ড সিলেকশন

বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে অনেক রকম সুবিধার আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডের টিভি দেখতে পাওয়া যায়। তবে কোন ব্র্যান্ডের টিভি ভালো বা কোনটা খারাপ সেটা সরাসরি বলা সম্ভব নয়।

কিছু টিভি ব্র্যান্ড আছে যেগুলো অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আর সেই জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের টিভিই কেনা উচিত বলে মনে করেন অভিজ্ঞ বিক্রেতারা। কারণ যেকোনও ব্র্যান্ড কেবল তখনই জনপ্রিয়তা পায় যখন সেই ব্র্যান্ডের সার্ভিস, প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এবং ফিচার অনেক ভালো থেকে থাকে।


ডিসপ্লে প্রযুক্তি

স্মার্ট টিভি নিয়ে যখন কথা বলা হয় তখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বা অংশটি হলো এই ডিসপ্লে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভিতে আলাদা রকমের ডিসপ্লে হতে পারে যেমন- এলইডি, ওএলইডি, কিউএলইডি এই তিনটির ক্ষেত্রেই এলইডি টেকনিক ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এদের মাধ্যমে তৈরি হওয়া পিকচার এবং ইমেজ কোয়ালিটি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এলইডি, ওএলইডি, কিউএলইডির কোন কোয়ালিটির ডিসপ্লে রয়েছে সেই হিসেবেই টিভির দাম কম-বেশি হয়ে থাকে।

সাধারণত বেশিরভাগ এলইডি টিভি বাজেটের মধ্যে ভালো পিকচার কোয়ালিটি দিয়ে থাকে। তবে যদি হাই কোয়ালিটির সিনেম্যাটিক পিকচার কোয়ালিটি চান, তাহলে ওএলইডি বা কিউএলইডি টিভি নিতে পারেন। কেননা পিকচার কোয়ালিটি, হায়ার ব্রাইটনেস, হাউ রেজুলেশন, বেস্ট ভিউইং অ্যাঙ্গেলের ক্ষেত্রে এলইডি ডিসপ্লের তুলনায় ওএলইডি এবং কিউএলইডি ভালো।

তাই টিভি কেনার আগেই আপনার টিভিতে অবশ্যই কোন ডিসপ্লে টাইপ রয়েছে সেটা দেখে নেওয়া উচিত।

স্মার্ট টিভি কেনার আগে যে বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত


আইপিএস ও নন-আইপিএস ডিসপ্লে

আইপিএস ডিসপ্লের কোয়ালিটি, ভিউইং অ্যাঙ্গেল, কালার কোয়ালিটি বেশ ভালো। আইপিএস ডিসপ্লেগুলো দেখতে আকর্ষণীয় এবং ক্রায়েস্টেল ক্লিয়ার ছবি দিয়ে থাকে। যদি টিভির ভিউইং অ্যাঙ্গেল নিয়ে চিন্তা হয় তাহলে আইপিএস ডিসপ্লে সবচেয়ে ভালো হবে। কেননা এক্ষেত্রে ভালো ভিউইং অ্যাঙ্গেলের এর সঙ্গে সঙ্গে অধিক ভালো কালার ডেলিভারির সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে আইপিএস ডিসপ্লে সাধারণত অধিক দামী হয়ে থাকে।


এইদিকে নন-আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেলগুলোকে টিভির দাম কম রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগ বাজেট স্মার্ট টিভিতেই নন-আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেল দেয়া হয়। আর মনে রাখতে হবে, আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেলের তুলনায় নন-আইপিএস ডিসপ্লে প্যানেলগুলো তুলনামূলকভাবে তেমন ভালো কালার ডেলিভারি এবং ভিউইং অ্যাঙ্গেল দিতে পারে না। তাই স্মার্ট টিভি যদি কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আইপিএস ডিসপ্লে থাকা টিভি কেনাই সবচেয়ে ভালো হবে।

ডিসপ্লে ভিউ অ্যাঙ্গেল

যখন বাজেটের মধ্যে একটি ভালো স্মার্ট টিভি কেনার কথা আসে, তখন বাজারে অসংখ্য টিভির মডেল চোখে পড়বে। তবে প্রত্যেক বাজেট স্মার্ট টিভির মধ্যে আলাদা আলাদা ফিচার, ফাংশন এবং অপশন রয়েছে।


এরকম একটি ফিচারের নাম হলো ডিসপ্লে ভিউ অ্যাঙ্গেল। যদি টিভির ভিউইং অ্যাঙ্গেল ভালো না থাকে বা উচ্চ মানের না থাকে, তখন কিন্তু টিভির প্রত্যেক সাইড থেকে দেখলে ক্লিয়ার ইমেজ বা ভিডিও দেখা যাবে না। যখন ডান বা বাম পাশ থেকে কোনাকুনিভাবে টিভি দেখবেন, তখন অন্ধকার অন্ধকার ভাব হবে। মূলত একেবারে টিভির সোজাসোজি বসে টিভি দেখলেই স্পষ্টভাবে পিকচার ব্রাইটনেস এবং ইমেজ কালারগুলো দেখতে পারবেন।

এক্ষেত্রে যখনই টিভি কিনতে যাবেন তখন সেই টিভিটি চালিয়ে কোনাকুনিভাবে প্রথমেই দেখে নিন। যদি ওপর-নিচ এবং ডান-বাম প্রত্যেক কোনা থেকে টিভির পিকচার , ব্রাইটনেস ও ইমেজ স্পষ্টভাবে দেখা ও বোঝা যায় তাহলে সেই টিভিতে ভালোমানের ভিউইং অ্যাঙ্গেল রয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েড ও স্মার্ট টিভি

এখন স্মার্ট টিভি বলতে বাজারে মূলত দুই ধরনের স্মার্ট টিভি দেখা যায়। যেমন— একটি সাধারণ স্মার্ট টিভি এবং একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি। সাধারণ স্মার্ট টিভিগুলো লিনাক্স-এর অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা কাজ করে থাকে এবং এগুলোতে কেবল কিছু সিলেক্টেড অ্যাপস ইনস্টল করে দেওয়া হয়। কোম্পানির দিয়ে দেওয়া অ্যাপস এবং সেবাগুলো ছাড়া এই সাধারণ টিভিগুলোতে অন্য কোনও ধরনের অ্যাপ বাইরের থেকে ইনস্টল করা যাবে না।

তবে একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি সম্পূর্ণভাবে একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের মতোই কাজ করে থাকে। এই ধরনের এলইডি স্মার্ট টিভিগুলোতে নিজের থেকে গুগল প্লে স্টোর এর মাধ্যমে যেকোনও অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করা যাবে। টিভি দেখার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, অনলাইন স্ট্রিমিং অ্যাপস ডাউনলোড করে সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। তাই আজকাল সবাই স্মার্ট টিভি বলতে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি বেশি পছন্দ করে।

স্মার্ট টিভি কেনার আগে যে বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত



ফিচার

একটি স্মার্ট টিভির মধ্যে কিছু জরুরি ফিচার থাকা জরুরি এবং একটি বাজেট স্মার্ট টিভিতে এগুলো থাকবে। টিভিতে এইচডিএমআই পোর্ট আছে কি না সেটা দেখতে হবে এবং যদিও আছে তাহলে কয়টা আছে তা দেখতে হবে। এইচডিএমআই এর মাধ্যমে টিভির সঙ্গে মাল্টিপল স্ক্রিন যুক্ত করতে পারবেন। এছাড়া যদি টিভিটি কম্পিউটারের সিপিইউ’র সঙ্গে সংযুক্ত করে মনিটর হিসেবে ব্যবহার করতে চান, তাহলেও এইচডিএমআই পোর্টের প্রয়োজন হবে। টিভিতে পেন ড্রাইভ বা এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ যুক্ত করার জন্য স্লটস রয়েছে কি না সেটা দেখুন। এতে পেন ড্রাইভ বা এক্সটার্নাল হার্ডডিস্কের মাধ্যমে সিনেমা বা কোননও কিছু নিজের টিভিতে দেখা যাবে।

এছাড়া যদি টিভিতে ব্লুটুথের ফিচার দেওয়া থাকে তাহলে বিভিন্ন ব্লুটুথ ডিভাইসের সঙ্গে টিভিকে কানেক্ট করার ক্ষেত্রে সেটাও কাজে আসবে। এছাড়া ক্যাবল বা ডিটিএইচ কানেকশন ছাড়া যাতে প্রচুর মুভি, সিরিজ ভিডিও ইত্যাদি দেখতে পারা যায় তার জন্য কিছু জরুরি ইনবিল্ড অ্যাপ রয়েছে কিনা সেটা দেখুন। যেমন— নেটফ্লিক্স, প্রাইম ভিডিও, ডিজনি প্লাস হটস্টার, জি ফাইভ, জিও সিনেমা, ইউটিউব ইত্যাদি।

এছাড়া অন্যান্য কিছু ফিচার যেমন— থিন ভেজেল্স, ব্লুটুথ রিমোট, ভয়েস সার্চ উইথ গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, হেডফোন জ্যাক, অ্যানালগ অডিও ইনপুট, বিল্ট ইন ওয়াইফাই, ইথারনেট, স্টেরিও সাউন্ড এই ধরনের কিছু বেসিক ফিচার থাকলে ভালো।

সাউন্ড কোয়ালিটি

যেকোনও স্মার্ট টিভির একটি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম হলো সাউন্ড সিস্টেম। ছবির সঙ্গে সঙ্গে ভালো মানের সাউন্ড কোয়ালিটি টিভির ভেতর থেকেই শোনা যেতে পারে, আলাদা সাউন্ড ছাড়া। এক্ষেত্রে যেই ব্রান্ডের স্মার্ট টিভি কেনার কথা ভাবছেন, সেই টিভির সাউন্ড কোয়ালিটি আগের থেকেই দেখতে হবে। যদি টিভির মধ্যে থাকা স্পিকার পেছনের দিকে থাকে, তাহলে সেই টিভি থেকে ভালো সাউন্ড নাও পাওয়া যেতে পারে।


এছাড়া অনেক স্মার্ট টিভির স্পিকার টিভির নিচের অংশে থাকে। সামনের দিকে থাকলে ভালো সাউন্ড পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, স্পিকারের ওয়াট যত বেশি থাকবে ততটাই বেশি ও ভালোমানের সাউন্ড সেই স্পিকার থেকে পাওয়া যাবে। তাই সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৩০ ওয়াটের স্পিকার আউটপুট রয়েছে এমন টিভি কিনতে হবে যেখানে কমেও।


সর্বপরি স্মার্ট টিভি কেনার আগে আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত। যা আপনাকে ভালো মানের একটি স্মার্ট টিভি কিনতে সাহায্য করবে বলে আশা করছি।

আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে এতক্ষন থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Previous Post Next Post