জেনে নিন বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয় এবং কেন শিশুর জন্মের ৫ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করা প্রয়োজন? অর্থাৎ আপনি যদি একজন অভিভাবক সন্তানের হয়ে থাকেন? বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে? সেই বিষয়টি জানতে ইচ্ছা পোষণ করেন? আজকের এই লেখাটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য।
আজকের এই পোস্টে আপনারা সম্পূর্ণভাবে জানতে পারবেন জন্মের পরে একজন বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন হয়?
পাঁচ বছরের উর্ধ্বে শিশুদের জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়? এছাড়াও জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সকল বিষয় জানতে পারবেন।
আমাদের মধ্যে অনেক অভিভাবক রয়েছে যারা শিশুর জন্মের পর ৫ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে না। যার ফলে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের জন্ম সনদ তৈরি করার সময় বিভিন্ন ধরনের বাড়তি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যা সে সময়ে ব্যবস্থা করা খুবই ঝামেলা এবং দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই অবশ্যই আপনার সন্তানের বয়স ৫ বছরের মধ্যে থাকতেই জন্ম সনদ নিবন্ধন পত্রটি তৈরি করে ফেলুন।
আপনারা সকলে জানেন একজন শিশুর জন্মের পরে প্রথম নাগরিকত্ব সার্টিফিকেটে হচ্ছে জন্ম সনদ। বর্তমানে সন্তানের স্কুল ভর্তি করা থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন ধরনের সুযোগ–সুবিধার জন্য জন্ম সনদপত্রটি খুবই জরুরী। আর বর্তমানে জন্ম সনদ ডিজিটাল হওয়ার ফলে এর ব্যবহার বেড়ে চলেছে ব্যাপক। তাই অবশ্যই আপনার সন্তানের বয়স পাঁচ বছরের মধ্যে থাকতে আপনারা আপনাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেটটি তৈরি করে নিন।
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
আপনার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন করতে প্রথমেই লাগে ইপিআই টিকা কার্ড বা হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকর্মীর প্রত্যয়ন পত্র। এছাড়াও বাসার হোল্ডিং নাম্বার এবং হাল সনদের হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ, পিতা–মাতা জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্র এবং যার জন্য আবেদন করবেন বা আবেদনকারীর পিতা–মাতা’র সচল একটি মোবাইল নাম্বার।
মূলত একজন সন্তানের জন্মের পরে এই সকল কাগজপত্র নিয়ে অবশ্যই আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করতে হবে।
তবে আপনি যদি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন এর আবেদন করতে চান সে ক্ষেত্রে নিচের কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হবে–
জন্ম নিবন্ধন করার পূর্বে বয়স ভেদে বিভিন্ন বয়সের জন্য বিভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ে থাকে নিচে আমি আপনাদেরকে কোন বয়স থেকে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন সে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করছি।
আপনার বাচ্চার বয়স যদি শূন্য থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো –
- অবশ্যই আপনার সন্তানের টিকা কার্ড বা স্বাস্থ্যকর্মী হতে প্রত্যয়ন পত্র স্বাক্ষর এবং সিলসহ প্রদান করতে হবে।
- বর্তমানে আপনি যে বাসাতে অবস্থান করছেন সেটি যদি আপনার স্থায়ী বাড়ী হয় তাহলে আপনার বাড়ী হোল্ডিং নাম্বার অথবা হাল সনদের হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ। আর যদি ভাড়া বাড়ী হয় সেক্ষেত্রে আপনার বাড়ীওয়ার হোল্ডিং নাম্বার বা হাল সনদের হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ প্রদান করতে হবে।
- জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর পিতা–মাতা অথবা অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে।
- পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধনের কপি ডিজিটাল (যদি থাকে)
- পিতা মাতার ভোটার আইডি কার্ডের কপি (যদি থাকে)
উপরের এই সকল কাগজপত্র গুলো শিশুর বয়স শূন্য থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে হলে অবশ্যই আপনার প্রয়োজন হবে জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে।
আপনার সন্তানের বয়স যদি ৪৬ দিন থেকে ৫ বছরের মধ্যে হয় তাহলে নিম্ন কাগজপত্র গুলি প্রয়োজন হবে –
- আপনার শিশুর জন্মগ্রহণের পর টিকা কার্ড অথবা স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রত্যয়ন পত্র স্বাক্ষর এবং সিলসহ প্রদান করতে হবে।
- স্থায়ী বা ভাড়া বাসার হোল্ডিং নাম্বার এবং হাল সনদের হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ।
- জন্ম সনদ আবেদনকারী পিতা মাতার জন্ম নিবন্ধন পত্র (যদি থাকে)
- আবেদনকারীর পিতা–মাতা অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার।
- আপনার বাচার বা জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের এক কপি রঙিন ছবি প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারী পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (যদি থাকে)
৪৬ দিন থেকে ৫ বছরের মধ্যে সন্তানের বয়স হয়ে থাকলে উপরের এই সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর বয়স যদি পাঁচ বছরের উর্ধ্বে হয় তাহলে অনেকগুলি ডকুমেন্ট প্রয়োজন পড়বে নিচে তা আলোচনা করা হচ্ছে –
- প্রথমে আবেদনকারীর বয়স প্রমাণের জন্য চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র( বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলিং কর্তৃক স্বীকৃত এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ব্যক্তির প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন হবে)।
- আবেদনকারীর সরকার কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
- জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর পিতা ও মাতারা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন বাংলা ও ইংলিশ বাধ্যতামূলক প্রয়োজন হবে।
- জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র বা এন.আই.ডি প্রয়োজন হবে।
- জন্ম নিবন্ধন আবেদন জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য আবেদনকারী পিতা/ মাতা’র স্থায়ী ঠিকানার হাল–নাগাদ কর পরিষদের প্রমাণপত্র। অথবা জমির দলিল খাজনা ও কর পরিষদের রশিদ।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর বয়স পাঁচ থেকে এর উর্ধ্বে হয়ে থাকলে উপরের এই সফল প্রয়োজন কাগজপত্রগুলি আপনার প্রয়োজন হতে পারে। তবে ইউনিয়ান বা পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে সরাসরি আপনারা কথা বলে হয়তো আরো কিছু প্রমাণপত্র কম লাগতেও পারে। তবে সরকার ঘোষিত যে সকল বিষয় কাগজপত্র দরকার তা উপরো আলোচনা করা হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন সনদ সার্টিফিকেট পেতে দুইটি মাধ্যম রয়েছে একটি অনলাইন একটি অফলাইন।আপনি খুব সহজেই ঘরে বসে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি আপনারা জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: কিভাবে জন্ম সনদ বাতিল করবেন? জেনেনিন সঠিক নিয়ম-২০২৪
এছাড়াও আপনার উপরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি আপনি আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন কাউন্সিল বরাবর বা পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করেও আপনি আপনার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে?
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ সালের শিশুর বয়স যদি শূন্য থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে হয় সেক্ষেত্রে কোন ধরনের টাকা–পয়সার প্রয়োজন হবে না।
কিন্তু শিশুর বয়স যদি ৪৬ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হয় তাহলে আপনাকে ২৫ টাকা প্রদান করতে হবে। আর যদি জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর বয়স পাঁচ বছরের উপরে হয় তাহলে ৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে কত সময় লাগে?
জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে আবেদন করার পর যদি আপনার যাবতীয় ডকুমেন্টগুলো ঠিক-ঠাক থাকে তাহলে সর্বোচ্চ দুই থেকে সাত দিনের মধ্যেই আপনি জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন কপিটি পেয়ে যাবেন।
জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিভাবে বের করবেন?
আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা এন.আই.ডি কার্ড থাকলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট করার পর সেখান থেকে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের নাম্বার চেক করতে পারবেন।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট লিংক