প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা এই পোস্টে প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ, প্রেসার লো হওয়ার কারণ নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।
নিম্ন রক্তচাপ যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর ঠিক তেমনি উচ্চ রক্তচাপ ও শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যা নিয়ন্ত্রণ না করলে আমাদের মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই আজকে আমরা প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও প্রেসার লো হলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় গুলো জানব।
আপনি যদি প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে চলুন দেরি না করে প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও প্রেসার লো হওয়ার কারণ গুলো এবং প্রেসার লো হলে আমাদের করণীয় কি তা সম্পর্কে জেনে নেই।
আমাদের পেজ শিরোনামে আরো যা যা থাকছে তা হলোঃ-
- শরীরে পানিশূন্যতার কারণে
- মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে
- পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের চাহিদা না মেটানো
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে
- পযার্প্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব
- রক্তশূন্যতা
- প্রেসার লো সিম্পটমস বা প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ
- প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণসমূহ
- প্রেসার লো হলে আমাদের করণীয়
- প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয়?
- এখন আমরা প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয় তা সম্পর্কে জানব
- এবার আসুন প্রেসার লো হলে কি কি খেতে হবে?
- শেষ কথা
মোদ্য কথাঃ- প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ ও প্রেসার লো হওয়ার কারণ এবং প্রেসার লো কেন হয় ?
প্রেসার লো হলে তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় জানব।
উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি বা সর্তক থাকি কিন্তু নিম্ন রক্তচাপ সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না বা সতর্ক থাকি না। উচ্চ রক্তচাপ যেমন শরীরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে ঠিক তেমনি একই ভাবে নিম্ন রক্তচাপ হলে মানবদেহের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিসাধন হয়। রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ এর কাছাকাছি থাকে তাহলে তাকে আমরা নিম্ন রক্তচাপ বলে থাকি। তাহলে চলুন প্রেসার লো হওয়ার কারণ গুলো জেনে নেয়া যাক।
শরীরে পানিশূন্যতার কারণে
বিশেষ করে গরমে আমাদের শরীরে যে অতিরিক্ত ঘাম হয় তার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। যার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতার কারণে প্রেসার লো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে
প্রেসার লো হওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা। আমরা অনেকে আছি যারা নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে পরিশ্রম করি । কিন্তু সেটা আমাদের শরীর সহ্য করতে পারেনা।যার ফলে তখন প্রেসার লো দেখা দেয়।
পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের চাহিদা না মেটানো
আমাদের শারীরের এমন অনেক কিছু আছে যা খাবারের ওপর নির্ভর করে। সুস্থ থাকাটাও অনেকটা খাবারের উপরই নির্ভরশীল। সুস্থ থাকতে হলে শরীরের কিছু কিছ পুষ্টি উপাদান পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাবারের চাহিদা পূরণ না হলে প্রেসার লো হতে পারে।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে
প্রেসার লো হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা। মানসিক অস্বস্তি, কোন কিছু নিয়ে ভয় পাওয়া এসব কারণেও প্রেসার লো হতে পারে।
পযার্প্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব
আমরা সকলেই জানি পর্যাপ্ত পরিমানে না ঘুমালে শরীর খারাপ হয়ে যায় । একজন স্বাভাবিক দিনে অত্যন্ত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে প্রেসার লো হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
অপুষ্টিগত সমস্যাঃ-
আমরা সকলেই জানি যে ভালো থাকার জন্য শরীরে পুষ্টি উপাদান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।আর সে পুষ্টি যদি না থাকে তাহলে প্রেসার লো দেখা দেয়।
রক্তশূন্যতা
শরীরে রক্ত না থাকা প্রেসার লো হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। তাই পযার্প্ত পরিমাণ রক্ত না থাকলে প্রেসার লো হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রেসার লো সিম্পটমস বা প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ
উচ্চ রক্তচাপ যেমন শারীরিক সমস্যার কারণ ঠিক তেমনি প্রেসার লো হলেও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়াকেই সাধারণতপ্রেসার লো বলে। সুতরাং প্রেসার লো হলে যেসব লক্ষণগুলো দেখা যায় আমরা এখন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণসমূহ
- শরীরে সবসময় দুর্বলতা অনুভব করা।
- মাথা ঘোরানো বা মাথা ঝিমঝিম করা প্রেসার লো হওয়ার অন্যতম লক্ষণ।
- স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতগতিতে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
- হঠাৎ করে দাঁড়ালে শরীরের ভারসাম্য অনিয়ন্ত্রন হয়ে যাওয়া প্রেসার লো হওয়া আরও একটি লক্ষণ।
- চোখে ঝাপসা দেখা এবং মাঝে মধ্যে অন্ধকার দেখা।
- বেশি বেশি পিপাসা লাগা।
- প্রেসার লো হয়ে যাওয়ার লক্ষণের মধ্যে মারাত্মক লক্ষণ হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া।
আমাদের মধ্যে অনেকের রক্তচাপ উচ্চ থাকে তাদের রক্তচাপ লো করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। আবার অনেকের রক্তচাপ অনেক লো থাকে তাদের রক্তচাপ উচ্চ করা কঠিন হয়ে যায়। যদি রক্তচাপ উচ্চ হয় সেটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর আর রক্তচাপ যদি লো হয় সেটিও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের সব সময় রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে হবে। যদি আমাদের প্রেসার লো হয় তাহলে করণীয় কি সেগুলো আমরা এখন জানব। তাহলে চলুন প্রেসার লো হলে করণীয় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
প্রেসার লো হলে আমাদের করণীয়
যারা উচ্চ রক্তচাপ এর ওষুধ খাচ্ছেন তারা অনেক সময় রক্তচাপ লো হওয়ার কারণে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এটা একদম উচিত নয়। দরকার হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারেন।
সমস্যার কারণ সনাক্ত করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিজে থেকে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। পরে এটি অনেক বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।কারণ রক্ত চাপ খুব বেশি লো হয়ে গেলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃদপিণ্ড নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয় ?
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ আছে যারা হাই প্রেসার নিয়ে বেশি কথা বলে কিন্তু লো প্রেসারকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু হাই প্রেসার যেমন শরীরের ক্ষতিকর করে ঠিক তেমনি লো প্রেসার ও শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। তাই রক্তচাপ সব সময় স্বাভাবিক অবস্থায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।
এখন আমরা প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয় তা সম্পর্কে জানব
- প্রেসার লো হলে আমাদের পালস স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে বেড়ে যায়।
- রোগীর হাত পা শীতল হতে থাকে।
- বমি, রক্তক্ষরণ ,রক্তশন্যতা, পানিশন্যতা, ডায়রিয়াএসব সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শরীর অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভূত হওয়া।
- অজ্ঞান হয়ে যায়।
- শারীরিক ও মানসিক অবসাদ তৈরি হয়।
- ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস হয়।
এবার আসুন প্রেসার লো হলে কি কি খেতে হবে?
আমাদের ইতিমধ্যেই জানা হয়েছে যে লো প্রেসার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি করে থাকে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে সবসময় যেন প্রেসার অতিরিক্ত বেড়ে না যায় আবার অতিরিক্ত কমে না যায়। তাহলে চলুন প্রেসার লো হলে কি কি খেতে হবে সেটা সম্পর্কে জেনে নেই।
খাবার স্যালাইনঃ- প্রেসার লো হলে অবশ্যই খাবার স্যালাইন খাবেন। এটি শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে তাই প্রেসার লো হলে খাবার স্যালাইন খাওয়া খুবই কার্যকরী।
গ্লূকোজঃ- নিম্ন রক্তচাপ হলে গ্লূকোজ খেলে ভাল ফলাফল পাবেন।
দুধ ও ডিমঃ- আমরা সকলেই জানি যে দুধ ও ডিম পুষ্টিকর খাবার। প্রেসার লো হলে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ পুষ্টিকর খাবারের অভাবে প্রেসার লো হয়ে যায়।
কিসমিসঃ- এক কাপ কিসমিস সারারাত ভিজিয়ে সকালবেলা উঠে খালি পেটে সেগুলো খাবেন এটি লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক সাহায্য করে।
মধু ও বাদামঃ- প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে মধু ও বাদাম বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে
নিয়মিত শরীরচর্চাঃ- প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে বেশ কার্যকরী হচ্চে নিয়মিত শরীরচর্চা করা।এটি হার্টে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
সতেজ শাকসবজি খাবেনঃ- আমরা সকলেই জানি যে আমাদের পুষ্টি উপাদান এর একটি অন্যতম উৎস হলো শাকসবজি। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সতেজ শাকসবজি খাবেন।
লবণাক্ত খাবার খাবেনঃ- সোডিয়াম রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই প্রেসার লো হলে অবশ্যই লবণাক্ত খাবার খাবেন এতে তাড়াতাড়ি প্রেসার বৃদ্ধি পাবে।
শেষ কথা
আপনারা যারা প্রেসার লো হওয়ার কারণ ও প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ এবং প্রেসার লো হলে করণীয় কি তা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাদের জন্য উপরে তা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি যদি লো প্রেসারে ভুগে থাকেন তাহলে অবশ্যই উপরের করণীয় গুলো লক্ষ্য পড়ুন । ইনশাআল্লাহ আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
এতক্ষন আমাদের লেখা গুলো পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম অসংখ্য পোস্ট আরও পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন যাতে সবাই উপকৃত হতে পারে।