গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও গুনাগুণ

 


গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও গুনাগুণ


গরুর দুধে অনেক উপকারিতা ও গুনাগুণ রয়েছে। মানুষের খাদ্য তালিকার অন্যতম প্রধান খাবার হচ্ছে এই গরুর দুধ। দুধের মধ্যে অন্যতম উপাদান ল্যকটোজ থাকায় তা দৈহিক গঠন ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে থাকে। এরমধ্য সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ থাকাই হলো এর শ্রেষ্ঠত্বের কারণ।

তবে গরুর দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জানা অজানা অনেক কিছু থাকলেও দুধ আমরা সকলেই পছন্দ করি। গরুর দুধ খেলে অনেক ধরনের গুনাগুণ পাওয়া যায়।

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গরুর দুধের উপকারিতা ও গুনাগুণগুলো কি কি?

গরুর দুধে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ,অ্যামিনো, খনিজ পদার্থ।

যেমন:

  • ক্রোমিয়াম
  • আয়রন আয়োডিন
  • জি্ংক
  • ম্যাঙ্গানিস সিলেনিয়াম
  • কোবাল্ড
  • কপার

এছাড়াও দুধে:

  • পানির পরিমাণ ৮৬.৫%
  • ল্যাকটোজের পরিমাণ ৪.৮%
  • চর্বি ৪.৫%
  • প্রোটিনের পরিমাণ ৩.৫%
  • ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের পরিমাণ ০.৫%
এবং আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে গরুর দুধ খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

গরুর দুধের গুণাগুণ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

১। দুধ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং রক্ত পরিষ্কারের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। দ্রুত অল্প সময় চুলায় রেখে পাতলা করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

২। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। দাঁতে হলুদ ছাপ পড়া, দাঁতে পোকা ধরা, দাঁতে ক্ষয় রোধ করে। ডি হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে এদের গড়ন করে।

৩। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংসপেশীর গঠনের সহায়তা করে এবং মাংসপেশীর আড়ষ্টতা দূর করে। মাংসপেশীর গঠনে অসুবিধা হলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে অতি দ্রুত তাই মাংসপেশির গঠনে এবং শারীরিক সুস্থতায় আমাদের বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। মাংসপেশির গঠনে যে সমস্ত খাবার আমরা খাই তার মধ্য দুধ অন্যতম। তাই মাংসপেশির গঠনে অবশ্যই দুধকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

৪। গরুর দুধ অন্যান্য খাবারের চাহিদা পূরণ করে। সকালে নাস্তার পরে ১গ্লাস দুধ খেলে তা অনেক সময় ধরে পেটে থাকে। নিয়ম‌ মেনে দুধ পান করলে শরীরের ওজন হ্রাস পায়। আপনার ডায়েট চার্টে নিয়ম মেনে এক গ্লাস দুধ রাখলে ওজন তাড়াতাড়ি কমে যাবে।

৫। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ পান করলে ঘুম ভালো হয়। দুধে থাকা অ্যামিনো এসিড ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ পান করুন।

৬। আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই তা থেকে এসিডিটির সমস্যা তৈরি হয়। গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে দুধ পান করা। কারণ দুধ পাকস্থলী ঠান্ডা রাখে এবং বুক জ্বালাপোড়া রোধ করে।

৭। মেয়েদের পিরিয়ডকালীন সময় ব্যথা অনুভব হয়। ব্যথা থেকে মুক্তি মিলে যদি গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যায় হলুদে রয়েছে পটাশিয়াম তাই পিরিয়ডকালীন ব্যাথা দূর করে এবং হলুদ শরীরের টক্সিন বের করে।

দুধ একটি সম্পূরুক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। মানুষের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় দুধ একটি জনপ্রিয় খাদ্য। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত। এটি শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে একটি অপরিহার্য খাবার। দুধে রয়েছে ভিটামিন বি১২ অ্যামিনো এসিড ল্যাকটোজ ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম আরো অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরপুর।


শরীরের ফিটনেস বাড়াতে দুধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা শরীর কে ফিট রাখার জন্য নানা ধরনের ব্যায়াম শরীরচর্চা করে থাকি।

যেমন:

  • প্রতিদিন হাঁটা
  • দৌড়ানো
  • সাঁতার কাটা

শরীরের ফিটনেস কে ঠিক রাখতে এসব ব্যায়াম করা ভালো তবে তার থেকেও বেশি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হচ্ছে শরীরকে ঠিক রাখতে বা ফিট রাখতে বেশি উপযোগী পদ্ধতি হলো খাবার গ্রহণ।

শরীরকে ফিট রাখতে আদর্শ খাদ্য গুলোর মধ্যে অন্যতম খাদ্য হচ্ছে দুধ। প্রতিদিন নিয়ম মেনে এক গ্লাস দুধ পান করলে শরীরের ফিটনেস ঠিক থাকে।
ঘুম কম হওয়ার প্রতিকার দুধ

শরীরকে সুস্থ রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। ঘুম না হলে শরীর স্থবির হয়ে পড়ে, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এক কথায় শারীরিক সুস্থতার পথে অনিদ্রা একটি বড় বাধা। আপনার অনেক সমস্যা দূর করতে দুধ একটি কার্যকারী খাবার। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেয়ে ঘুমালে রাতে অনিদ্রার সমস্যা থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।
মানসিক চাপমুক্ত রাখে দুধ

মানসিক চাপ শরীরের জন্য মোটেও সুফল নয়। মানসিক চাপের ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। মানসিক চাপ শুধু মনকে অসুস্থ করে না শরীরকেও অসুস্থ করে ফেলে যার কারণে মানসিক চাপ দূর করা জরুরি। গরুর দুধে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান থাকে যা মানুষের শরীর ও মনকে সতেজ রাখে মানসিক চাপ থেকে মানুষ মুক্তি পায়। তাই মানসিক চাপ কমাতে প্রতিনিয়ত এক গ্লাস দুধ পান করবেন।



রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় গরুর দুধ

গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও গুনাগুণ



গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল যা ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তকে পরিচ্ছন্ন রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়,পাকস্থলী ঠান্ডা রাখে। তাই সুস্থ থাকতে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে দুধ পান করা জরুরী।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহাজ্য করে এই গরুর দুধ

উচ্চ রক্তচাপ যে কোন মানুষের জন্য ক্ষতিকর। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে। ডাক্তাররা সব সময় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো গরুর দুধ পান করা। প্রতিদিন দুপুরে খাবারের পর অথবা বিকেলে এক গ্লাস দুধ পান করলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ত্বক সুন্দর রাখতে

গরুর দুধ কেউ উজ্জ্বল রাখতে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ‌এক গ্লাস গরুর দুধ পান করলে এটি ত্বকের মেলানিনের পরিমাণ কমিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে ফর্সা করে। এছাড়া গরুর দুধ দিয়ে বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করেও মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

গরুর দুধের গুনাগুন সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত। অনেক আগে থেকেই গরুর দুধ শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের পছন্দের তালিকায় থাকে। এটি সুস্বাদু সাথে সাথে স্বাস্থ্যকরও। সুস্বাস্থ্য ও সুঠাম দেহের অধিকারী হতে হলে গরুর দুধ পান করা জরুরী।
শক্তি বাড়ায় দুধ

দুধ শরীরের হাড়কে মজবুত করে হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। নিয়মিত দুধ পান করলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়। পুষ্টিহীনতায় অনেক সময় শরীরের তাকাত বা শক্তি কমে যায় এই হারানো শক্তি ফিরে পেতে নিয়মিত দুধ খাওয়া উত্তম।


গরুর দুধ শিশুর জন্য উপযোগী কখন?

অনেকেরই প্রশ্ন থাকে শিশুকে গরুর দুধ কোন বয়স থেকে দেওয়া যাবে। কেউ কেউ হয়তো এটাও ভাবেন যে ছয় মাসের পর থেকে যেহেতু শক্ত খাবার বাচ্চাকে দেওয়া যায় তাই গরুর দুধ বাচ্চার জন্য উপযোগী। কিন্তু না এই ধারণা ভুল ধারণা আপনার সোনামনির পরিপাকতন্ত্র গরুর দুধ হজম করার জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।

তাই ছয় মাস পরিপূর্ণ হলেই বাচ্চাকে গরুর দুধ দেওয়া যাবে না। অন্তত এক বছর পর বাচ্চার জন্য গরুর দুধ উপযোগী হয় তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাকে গরুর দুধ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও গুনাগুণ

দুধ পান করার উত্তম সময় কোনটি?

সাধারণত স্বাভাবিক শরীরের জন্য রাতে ঘুমানোর আগে দুধ পান করা উত্তম সময় তবে কেউ যদি ওজন কমানোর জন্য ডায়েটে থাকেন তাহলে সকালের নাস্তা এক গ্লাস দুধ রাখতে পারেন। কোলেস্টোরল বা উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা থাকলে দুপুরে খাবারের পর বা বিকেলে দুধ পান করা উচিত।

শরীরের সুস্থতাই মনকে সুন্দর করে।

“সুস্থ দেহ”
“সুন্দর মন”

এই প্রবাদটি যেন সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই শারীরিক সুস্থতায় আমাদের আদর্শ খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন । আরো বহু আগে থেকেই মানুষ সুস্থতা এবং সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গরুর দুধ খেয়ে আসছে। সব সময় এটি মানুষের জনপ্রিয় খাবার। গরুর দুধে থাকা পুষ্টিগুণ শরীরকে সতেজ চাঙ্গা রাখে। তাই সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন রক্ষায় প্রতিদিন খাবারের তালিকায় এক গ্লাস দুধ খাবারের পরিপূর্ণতা এনে দেয়।

সচারাচর প্রশ্ন-উত্তর:

দুধ পান করার উত্তম সময় কোনটি?

  • সকালের নাস্তা, দুপুরে খাবারের পর বা ঘুমোনোর আগে দুধ পান করা উত্তম সময়।"

গরুর দুধ শিশুর জন্য উপযোগী কখন?

  • এক বছর পর বাচ্চার জন্য গরুর দুধ উপযোগী হয় তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
Previous Post Next Post