সৃজনশীল প্রশ্ন -
সৃজনশীলতা কখনো নিয়ম মেনে হয় না, কোনো নিয়মের বাধ মানে না। আর আমাদের ব্যবস্থায়? সৃজনশীল প্রশ্নের 'গ' হতে হবে তিন প্যারায়, 'ঘ' হতে হবে চার প্যারায়। শুরু হতে হবে এই নিয়মে, শেষ হতে হবে ওই নিয়মে... আরে বাবা এত নিয়মকানুন থাকলে আবার এটা কীসের সৃজনশীল? কোনো যুক্তি আছে?
একটা বড় অংশের শিক্ষার্থী আছে যারা প্রশ্ন মুখস্থ করে, শিক্ষকেরাই বা কি করে? শিক্ষার্থীরা মাসের পর মাস প্রস্তুতি নিয়ে পাহাড়সম মানসিক চাপ নিয়ে ৩ ঘন্টা বসে বসে যত্ন করে পরীক্ষা দেয়। যেই পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থী তার সবটুকু ঢেলে দিয়েছে সেই খাতা কিনা একজন শিক্ষক '৩০' সেকেন্ডে দেখে ফেলেন, শিক্ষার্থীরা কি লিখেছে কিভাবে লিখেছে তা দেখারই তো সময় নাই, সৃজনশীলতা দেখবে কিভাবে।
আমি নিজেই এর প্রমাণ, আমি কোনোদিনও প্রশ্ন মুখস্থ করিনা, এমনকি গাইড পর্যন্ত খুলি না। পক্ষান্তরে একশ্রেণির তথাকথিত 'ভালো শিক্ষার্থীরা' প্রশ্ন মুখস্থ করে পরীক্ষায় হোম রান মারে। আমার মা আমাকে জিজ্ঞাসা করে ওরা পারলে আমি পারি না কেন? আমি উত্তর দেই যে ওরা ফার্মের মুরগি আর আমি দেশি মুরগী(😅)। আমি কি বুঝিয়েছি বুঝেছেন আশা করি। তো এই হলো আমাদের সৃজনশীল ব্যবস্থা, যেখানে সৃজনশীলতা দেখানো নিষেধ।
একই জিনিস সবাইকে গিলানো -
যারা স্মার্টফোনের ফ্যাক্টরি দেখেছেন তারা জানেন সেখানে কিভাবে ফোন প্যাক করা হয়। একই মডেলের ফোনের একই প্যাকেজিং, একই ম্যানুয়েল, সব একই। আবার ভিন্ন মডেলের ফোনের সবকিছুই ভিন্ন। আমরা মানুষরা সবাই এক মডেলের না, মানে একরকম না। আমাদের প্রত্যেকের আগ্রহ, ইচ্ছা, চিন্তাধারা ইত্যাদি সব ভিন্ন।
কিন্তু আমাদের সাজানো হচ্ছে একইভাবে। সবার একই সিলেবাস, একই বই সবকিছু একই। কেন, বিষয় একই থাকুক কিন্তু আমাদের ভিন্ন লেখকের বই থাকুক, অপশন থাকুক, আমরা নিজেদের আগ্রহ মতো যেটা ইচ্ছা সেটা নিই। সেটা করবে না, আচ্ছা এটার কথা বাদ দিন। বইয়ের ভাষাই দেখুন। ২০২৪ সালের মাধ্যমিকের বই সম্পাদনা করা হয়। আগেরটার কথা তো বাদই দিলাম,এখন বর্তমানেরটার কথাই বলি।
এমন কাঠখোট্টা ভাষায় লিখা হয়, আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় এরা একটা বই লিখার পর ছাত্রদের কাছে পাঠিয়ে দিক, এরপর ছাত্ররা মিলে এটাকে কিছুটা সহজপাঠ্য করুক...
গাইড বই, কোচিং সেন্টার ইস্যু -
শিক্ষাবিদদের কথা হলো কোনো গাইড পড়া যাবে না, শুধু পাঠ্যবই পড়তে হবে। কোচিং এ যাওয়া যাবে না, শুধু স্কুলে পড়লেই হবে।
আচ্ছা শিক্ষার্থীরা গাইড কেন পড়বে না বলুন তো?
ফিজিকস, কেমিস্ট্রি এসব বইয়ে অঙ্ক কষার কার্যকরী সূত্র তো দূরে থাক, ঠিকমতো নমুনা প্রশ্নও দেওয়া থাকে না। কেউ গাইড না দেখে শুধু এসবের বই পড়ে পরীক্ষা দিতে গেলে দেখবে যে সব প্রশ্ন মাথার নিচে দিয়ে যাচ্ছে।
আর ক্লাসে যে কেমন পড়া হয় সেটা আর বললাম না (আমি সেরা স্কুলদের কথা বলছি না, সারা বাংলাদেশে হিসাবে বলছি)। আমি একজন শিক্ষকের কাছে শুনেছিলাম আমাদের স্কুল নাকি বাংলাদেশের ৮ম স্কুল, অথচ এখানে দশ বছরে ২০০-২৫০ জন শিক্ষকের মাঝে আমি ১৫ জন সত্যিকার শিক্ষকও পেয়েছি কিনা সন্দেহ। এই যদি হয় ক্লাসের অবস্থা তাহলে শিক্ষার্থীরা কেন ব্যাচ, কোচিং এ পড়বে না?...
ছাত্রদের কেন পড়ার জন্য জোড় করতে হয় -
এটা বিশেষভাবে বাংলাদেশের সমস্যা। আচ্ছা আউট বইয়ের কথা বলি। গল্পের বইয়ের কথা ভুলে যান, আসলেই শিক্ষামূলক বই।যেমন-
ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়।
এগুলাও পড়ার বই আর স্কুলের বইও পড়ার বই। তাহলে কেন স্কুলের বই শিক্ষার্থীরা পড়ে অনিচ্ছায় আর আউট বই পড়ে সদিচ্ছায়? এটার মূল উত্তর আগেই দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন: কম পড়ে বিসিএস ক্যাডার প্রিলিমিনারি পাসের নিঞ্জা টেকনিক
সবাইকে একজিনিস গেলানো আর বিরক্তিকর কাঠখোট্টা লিখার ধরন। অসুস্থ ব্যক্তি বমি বমি ভাব করলে তাকে যখন খাবার দেওয়া হয়, দায়ে পড়ে ঠিকই পেট ভরে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বমি করে সব বের করে দেয়। আমরাও পড়ি পরীক্ষার জন্য, পরীক্ষার খাতায় সব বের করে দিয়ে আসি...
শিক্ষার অর্থ -
মা-বাবা'রা আমাদের বলেন, একটু ভালোমতো না পড়লে একটা চাকরি পাবা? ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে না? এখন সমস্যা হচ্ছে আমরা শিক্ষার অর্থ ভুলে গিয়ে এটাকে দক্ষতার সাথে গুলিয়ে ফেলেছি।
একজন একটা ডিগ্রি নিয়ে হলো সিএসই ইঞ্জিনিয়ার, একজন ডাক্তার, একজন ডিজাইনার। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি সব একেকটা দক্ষতা, স্কিল। এর সাথে শিক্ষার সম্পর্ক কোথায়? দক্ষতাই যদি শিক্ষা হতো তাহলে আমি গাড়ি চালানো শিখে বলতাম যে আমি ড্রাইভার, তো আমি শিক্ষিত। হাস্যকর না?