বিয়ে মানেই কি অভিশপ্ত যৌতুক?

বিয়ে মানেই কি অভিশপ্ত যৌতুক?

এই অভিশপ্ত যৌতুকের কারণে অসংখ্য নারী- নিগৃহীতা, অপমৃত্যু, গলায় ফাঁসির দড়ি ইত্যাদির শিকার হচ্ছে। যৌতুক লোভী কাপুরুষদের কারণে অসংখ্য ছোট শিশু মায়ের আদরের কোল হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিশপ্ত যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে অনেক কন্যার দরিদ্র পিতামাতা সর্বস্ব বিক্রি করে নিরন্ন ও দুস্থ হয়ে পড়ে।

সমাজে দারিদ্র্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তি, অপরাধ প্রবণতা, দুর্নীতি প্রভৃতির সমস্যার পিছনে অভিশপ্ত যৌতুকের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।

সমাজে মেয়ের অভিভাবকগণ যৌতুকের করাল গ্রাসে জিম্মি হয়ে মোটা অঙ্কেরর্ ঋণের বোঝা বহন করে থাকে। যৌতুক শুধু নগদ টাকা-পয়সা বা ফার্নিচার দেওয়া নয়, বরং ইসলামী শরিয়তকে উপেক্ষা করে বরপক্ষ থেকে অতিরিক্ত দাবিকে বলা হয়। অনেক সময় বরপক্ষের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কন্যার অপারগ মা-বাবা দুশ্চিন্তা করতে করতে জীবনের বিশাল অংশ নষ্ট করে ফেলেন।

বিয়ে মানে যৌতুক নয়

সৃষ্টিগতভাবেই পুরুষ ও নারী একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবনে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই মানবজাতীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা তথা পৃথিবীতে মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নারী ও পুরুষের নিয়মতান্ত্রিক মিলনের বিধান প্রবর্তন করেছেন। এ নিয়মতান্ত্রিক মিলনের নামই বিয়ে।

রসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর সোনালি যুগের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ও বরকতময় সুন্নত হলো এ পবিত্র বিয়ে। মুসলিম জাতির জন্য জান্নাত কামনার উত্তম পন্থা হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে। সুতরাং মুুসলিম উম্মাহর জন্য বিয়ে সম্পাদন কখনও যৌতুক আদায়ের মাধ্যম বা নারী নির্যাতনের হাতিয়ার হতে পারে না। কেননা, বিয়ে মানবচরিত্র সংরক্ষণের একমাত্র উপায়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বিয়ে করেছে, নিশ্চিত সে তার দ্বীনের অর্ধাংশ হেফাজত করেছে। বাকি অর্ধাংশের জন্য আল্লাহকে ভয় কর। (বায়হাকি)

যৌতুকের কারণ সামর্থ্যহীনতা

ইসলামী শরিয়তে বিয়ের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্ত্রীর খরচপাতির মতো সামর্থ্য থাকা স্বামীর। অন্যথায় স্বামীর জন্য বিয়ের পরিবর্তে রোজা রাখার বিধান দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু অধুনা মানব সমাজে যৌতুক সামগ্রী আদায়ের লক্ষ্যে কিছু যৌতুক লোভী কাপুরুষ বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারা শুধু বিয়ে বলতে যৌতুক আদায়কে বুঝে। অথচ যৌতুক একটি অভিশপ্ত কাজ।


ইসলামী আইনে নিষিদ্ধ এই জঘন্য কু-প্রথাকে সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে মানবতা ও ধর্মের খাতিরে। 

রসুল (সা.) বলেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা, তা চক্ষুকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত রাখে। আর যে সামর্থ রাখে না, সে যেন রোজা রাখে, রোজা হলো তার জন্য আত্মমনস্কতা।’ (বুখারি : ৫১২১; মুসলিম : ৩৪৬৪)

যৌতুকের জন্য আঘাত নয়

দুঃখের বিষয় হলো, আজ এ পবিত্র বিয়ে অভিশপ্ত যৌতুকের কারণে মানবসমাজে মহামারি রোগের মতো রূপ ধারণ করেছে। অথচ শরিয়তে যৌতুকের আদান-প্রদান সম্পূর্ণরূপে হারাম। যৌতুকের জন্য নির্যাতন, হত্যার হুমকিসহ অনেক অন্যায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ইসলাম স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে আঘাত করতে নিষেধ করেছে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন নিজ স্ত্রীকে দাস-দাসীর মতো না মারে; অতঃপর সে দিন শেষে তার সঙ্গে সহবাস করে।’ (বুখারি : ৫২৫৯)


Previous Post Next Post