মানুষ বিনোদন কেন খোঁজে?
সেই মানুষ বিনোদনের ব্যাপারে বেশী আগ্রহী, যে তার ব্যক্তিগত জীবনে বেশী অসন্তুষ্ট। "ভালো লাগছে না, অসহ্য লাগছে। দম আটকে আসছে। একঘেঁয়ে জীবন। ভালো লাগার জন্য আলাদা কিছু চাই" - এই চাওয়াই হলো বিনোদনের জন্য প্রত্যাশা।
অর্থাৎ ব্যক্তিজীবনে যে যত মন থেকে হাসতে পারে না, যে যত অসন্তুষ্ট, সে তত বিনোদনের খোঁজ করে। অনেক মানুষের সাথে চলাফেরা করে অথচ নি:সংগতা অনুভব করে। নিজের মনের অস্থিরতা দূর করার জন্য "বিনোদন" নামক উপকরণটির উপর নির্ভর করতে চায়।
বিনোদন তার অস্থিরতা সাময়িকভাবে কমায় মাত্র, তাই বিনোদনের রেশ কাটতেই আবারো অস্থির হয়ে উঠে, খোঁজ করে আরো আরো বিনোদন, নতুন কোনো বিনোদন। বিনোদনের খোঁজে অনেকে ধীরে ধীরে অবৈধ উপকরণ, বিকৃত উপকরণের প্রতিও আশক্ত বা আগ্রহী হতে থাকে।
অন্যদিকে, যে ব্যক্তি নিজের দৈনন্দিন জীবনে সুখী। যে ব্যাক্তি তার দৈনন্দিন জীবনকে উপভোগ করতে পারে, তার জন্য বিনোদনের প্রয়জনীয়তা কম।
যখন কেও ইসলামের আলোকে জীবন যাপন করে তখন তার জীবনে লোভ, প্রতিহিংসা থাকে না। চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান কম থাকে। সে সারাক্ষণ অসাধু প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে না। অভিনয় করে সবসময় মিথ্যা হাসি ঠোটে লাগিয়ে রাখতে হয় না। দম আটকে আসে না। তাই ক্ষণে ক্ষণে বিনোদনের জন্য তীব্র আকাংখাও জাগে না। সে ইসলাম পালনের মাধ্যমে সয়ংক্রিয়ভাবে হালাল বিনোদনের মধ্যেই থাকে। তাই, ইসলামী জীবন যাপন আমাদের হারাম ও নিত্যনতুন বিনোদনের চাহিদাকে কমিয়ে দিতে পারে।
ইসলাম অনুমোদিত বিনোদন:
যে বিনোদন আল-কুরআন ও সুন্নাহ্র বিপরীতে যায় না সেগুলোই হালাল বিনোদন ধরে নেয়া যায়।
যেমন:
পরিবার পরিজনের সাথে সময় কাটানো
যদি পরিবারের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা যায়, আর সবার সাথে সময় কাটানো যায়। তাহলে এটা অন্যতম উৎকৃষ্ট একটি বিনোদন।
খেলা-ধুলা (শারীরিক কসরত আছে এমন খেলা)- দৌড়, কুস্তি
- কৌতুক, হাস্যরস
- কবিতা আবৃত্তি
- প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করা
- ভ্রমণ
- হালাল সংগীত (বা নাশিদ)
- কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআন তিলাওয়াত শোনা
উল্লেখ্য এগুলো ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে যেন:
কৌতুক করতে গিয়ে অপরের মনে আঘাত দেয়া না হয়। কোনো হারাম উপকরণ না থাকে। যেমন পর্দা নষ্ট না হয়।
ইসলামে আনন্দ-বিনোদন ও অবকাশযাপন
আনন্দ-বেদনা নিয়েই মানবজীবন। মানুষের জীবন যেমন কখনও আনন্দের রোল পড়ে, তেমনি কখনও ভরে ওঠে দুঃখ-ব্যথায়। দেহ ও মনের ক্লান্তি-ক্লেশ দূর করতে পারে একটুখানি বিনোদনের রেশ। জীবন মানে সদা-সর্বদা কঠোর নির্দেশনা পালন নয়; বরং মানবজীবনে বিশ্রাম ও অবকাশের প্রয়োজন আছে।
জীবন মানেই হাসি-কান্না ও আনন্দ-বেদনার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের আনন্দ-বিনোদনেরও শিক্ষা দিয়েছেন। দ্বীনের সীমা ও পরিধির ভেতরে থেকে জীবনের যেকোনো উপলক্ষে আনন্দ-উদযাপন করা যায়।
যেমন- জীবনের সাফল্য, পার্থিব উন্নতি-অগ্রগতি ও ইবাদতসহ সব কিছু নিয়েই আনন্দ প্রকাশ করা যায়। তবে ইসলামি শরিয়তের প্রমাণিত বিধান লঙ্ঘন করে এমনভাবে আনন্দ-বিনোদনে লিপ্ত হওয়া গর্হিত কাজ। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। খোদাপ্রদত্ত বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মানুষ অনায়াসেই হালাল-হারামের মাঝে তফাত করতে পারে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, ‘এক লোক রসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালো ও মন্দ কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘ভালো কাজ যা অন্তরকে স্বস্তি দেয় ও আত্মাকে প্রশান্ত করে। আর পাপ কাজ হলো যা অন্তরে কালো দাগ ফেলে দেয় এবং অন্তরে দ্বিধা ও সংশয় সৃষ্টি করে।’
-মুসনাদে আহমদ : ১৮০৩০
গান কি ইসলামে হারাম?
কিছু মডারেট মুসলিম এবং নাস্তিকদেরকে বলতে শুনা যায় যে, ইসলামে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ? গান-বাজনা শুনতে সমস্যা কোথায়?
আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ'আরী বর্ণনা করেছেন। রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা লুকমানে বলেন, এদের জন্য রয়েছে অবমানকর শাস্তি। অর্থাৎ যারা গান-বাজনা শুনে তাদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ কঠিন শাস্তি রয়েছে।
ইসলামে নারীর জন্য কি কি হারাম?
একজন মুসলিম নারীর জন্য অমুসলিম পুরুষকে বিয়ে করা হারাম বলে বিবেচিত হয়। এটি এই ধারণার কারণে যে পুরুষটি পরিবারের প্রধান, যিনি পরিবারকে সমর্থন করেন এবং পুরুষকে তার স্ত্রীর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
সামাজিক এবং বহিরঙ্গন কার্যক্রম:
প্রকৃতিতে হাঁটাচলা, সাইকেল চালানো, বাইরে খাওয়া, এবং অনুমোদিত সামাজিক জমায়েত ইসলামে হালাল বিনোদনের অন্যান্য রূপ। একটি সুন্দর বাগানে বা একটি হ্রদের কাছাকাছি একটি সতেজ হাঁটা আমাদের শরীরকে শক্তিশালী করার একটি দুর্দান্ত উপায়।
ইসলাম কি মজা করার অনুমতি দেয়?
হাসা-হাসি, মজাকরা এবং কৌতুক ইসলামে জায়েজ আছে যদি কুরআন ও হাদিস থেকে নির্দেশনা অনুসরণ করা হয় । হাস্যরস ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার জন্য, রসিকতা নিন্দিত হওয়া উচিত নয় এবং আদব (আচার) সীমার মধ্যে হওয়া উচিত।